ইভ্যালি : জন্ম, উত্থান ও বিজনেস মডেল পর্যালোচনা
লেখকঃ নাজিম উদ্দিন শেখ
‘ইভ্যালি’ – বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের ই কমার্স গুলোর শেয়ার এর তথ্য নিয়ে ডেটা অ্যানালাইটিকস প্ল্যাটফর্ম ‘শেয়ার টুডে’ এর প্রকাশিত একটি রিপোর্টে ৬৮% শেয়ার নিয়ে প্রথম স্থানে ছিল দেশের শীর্ষ ই-কমার্স কোম্পানি দারাজ। ২১% শেয়ার নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিল ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ইভ্যালি।
সিমিলার ওয়েবের তথ্য সূত্রে, ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে প্রায় ৫৯ লক্ষ বার ভিজিট হয়েছিল ইভ্যালির ওয়েবসাইট। অন্যদিকে, একই মাসে দারাজের ওয়েবসাইট ভিজিট হয়েছিল ৪৬ লক্ষ বার। এছাড়াও ওয়েব ট্রাফিক জেনারেশন থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্যারামিটার বিবেচনা করলে ইভ্যালি যে কোনো ই – কমার্স প্ল্যাটফর্ম এর চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। অথচ প্রতিষ্ঠানটি শুরুর এখনও ২ বছরও পার হয় নি। এর মধ্যে কোম্পানিটি তার অভূতপূর্ব সব সাফল্যর কারণে যেমন আলোচিত, তেমনি অনেক কার্যক্রমের জন্য সমালোচিত।
ইভ্যালির জন্ম
সাবেক ব্যাংকার মোঃ রাসেলের ব্যবসায়িক জীবন শুরু হয় ২০১৬ সালে ‘কিডস ডায়পার’ ব্র্যান্ডের মাধ্যমে। অল্প কিছুদিনের মাঝেই ব্র্যান্ডটি মার্কেটে বেশ ভালো পরিচিতি পেয়ে যায়। পরবর্তীতে তিনি একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠা করার কথা ভাবেন। যার ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে যাত্রা শুরু করে ইভ্যালি।
মোবাইল কমিউনিকেশনে থ্রিজি আসার পর থেকেই বাংলাদেশের ভোক্তা সাধারণ অনলাইন কেনাকাটায় সরাসরি অংশ নিতে শুরু করে। শুরুর দিকে শহর কেন্দ্রিক থাকলেও সুলভ মূল্যে ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক ও ফোরজি প্রযুক্তি আসার পর ই -কমার্স বিজনেসের রিচ ধীরে ধীরে মফস্বল শহরেও পৌঁছে যেতে থাকে। যার ফলে ই কমার্স সেক্টর যেমন বড় হচ্ছিল। সাথে করে মার্কেটের ই-কমার্স গুলোর ব্যবসাও নির্দিষ্ট মাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছিল।
দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে ছোট – বড় ১৩০০ টি ই – কমার্স কোম্পানি এবং ২০০০টি ওয়েব ভিত্তিক রিটেইলার আছে। এছাড়াও প্রায় পঞ্চাশ হাজার উদ্যোক্তা ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ই-কমার্সের সঙ্গে যুক্ত আছেন। ই-ক্যাব হতে এই বছরে আগস্ট মাস পর্যন্ত প্রাপ্ত ডেট অনুসারে, বাংলাদেশের ই – কমার্স মার্কেটের সাইজ দাড়িয়েছে ১৬,৬১৬ কোটি টাকা। মাত্র ৫ বছর আগে ২০১৬ সালে এটি ছিল মাত্র ৫৬০ কোটি টাকা। দেশের ই-কমার্সের এ রকম অবস্থার মধ্যেই মধ্যেই মারকুটে ব্যাটসম্যান হিসেবে মার্কেটে আগমন ঘটে ইভ্যালির।
ইভ্যালির উত্থান
শুরুর দিকে অল্প কিছু কর্মচারী ও একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকে ইভ্যালি। এর পর কোম্পানিটি এর ইউনিক ও এগ্রেসিভ বিজনেস মডেলের মাধ্যমে খুব কম সময়ের মধ্যে বেশ ভালো সাড়া ফেলে দেশের ইকমার্স মার্কেটে। ২০১৯ সালের শুরুর দিকে ইভ্যালি বিভিন্ন বড় বড় অফার এবং ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম চালাতে থাকে। বিভিন্ন অফার এবং ক্যাম্পেইন এর পাশাপাশি কোম্পানিটি অনলাইনে এবং অফলাইনে বিপুল পরিমাণ প্রচার-প্রচারণা এবং প্রমোশন চালিয়ে যায়।
ইভ্যালি ২০১৯ সালে তাদের কার্যক্রম শুরুর কিছুদিনের মধ্যে ফেসবুক গ্রুপ তৈরি করে। ফেসবুক গ্রুপ খোলার মাত্র ৩ মাসের মধ্যেই সদস্য সংখ্যা ৪৫,০০০ ছড়িয়ে যায়। একই বছরের আগস্ট মাসে স্মার্টফোন অ্যাপ নিয়ে আসে ইভ্যালি । এপসটি ২ মাসের মধ্যেই প্রায় ৫০,০০০ বারের বেশি ডাউনলোড করা হয়। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের ইভ্যালির Gross Merchandise Value (GMV) ছিল প্রায় ৬০ কোটি টাকা এবং Net Merchandise Value (NMV) ছিল প্রায় ৫০ কোটি টাকা। সে বছরের নভেম্বরে মাসিক ৫০,০০০ অর্ডার পাওয়ার মাইলফলক অর্জন করে কোম্পানিটি।
২০১৯ সালেই দৈনিক গড়ে ১৫,০০০ এর বেশি ব্যবহারকারী ইভ্যালির ওয়েবসাইট ভিজিট করেছে। প্রমোশনাল ইভেন্ট গুলোর দিনে সংখ্যাটি ৪০,০০০ – ৫০,০০০ পর্যন্ত পৌছে গেছিল৷ এই সংখ্যাগুলো ২০২০ সালে বেড়ে যায় কয়েক গুণ। শুরু থেকেই ইভ্যালির টার্গেট ছিল একটি পরিপূর্ণ Everything Store, অর্থাৎ সব ধরনের প্রোডাক্ট পাওয়া যাবে এমন একটি ই-কমার্স হওয়ার। রড – সিমেন্ট থেকে শুরু করে গাড়ি সহ ৪,০০০ এরও বেশী ক্যাটাগরির প্রোডাক্ট বিক্রি হয় ইভ্যালিতে। বড় বাস্কেট সাইজ রেখে বেশি অ্যামাউন্ট এর মার্চেন্ডাইজ ভ্যালু অর্জন করাই ছিল এই স্ট্র্যাটেজির মূল উদ্দেশ্য।
বর্তমানে প্লাটফর্মটিতে গড়ে প্রতি মাসে প্রায় ১০ লাখ অর্ডার প্লেস করা হচ্ছে। এখানে লেনদেন হচ্ছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার প্রোডাক্ট। ইতিমধ্যেই ইভ্যালির কাস্টমারের সংখ্যা ৩৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। একটি এভরিথিং স্টোর হতে গেলে পন্যের পাশাপাশি রিটেইলারও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইভ্যালিতে ব্র্যান্ড সেলার, বড় রিটেইলার, ছোট অফলাইন রিটেইলার সহ প্রায় ২৫,০০০ হাজারের বেশি সেলার আছে। শুরুর দিকে ঢাকা ভিত্তিক রিটেইলার এর আধিক্য থাকলেও সম্প্রতি অন্যান্য জেলা শহরের অনেক সেলারকেও অনবোর্ড করা হয়েছে।
নিজেদের অপারেশনাল স্ট্যাটিজিতে লিন অপারেশন ম্যাথড ফলো করে এসেছে ইভ্যালি। অর্থাৎ প্রতিনিয়ত কাস্টমার ও অর্ডার এর সংখ্যা বাড়লেও নিজেদের রিসোর্স সীমিত রেখেছিল কোম্পানিটি। যদিও বর্তমানে ইভ্যালি তাদের কার্যক্রম আরো বড় পরিসরে বৃদ্ধি করতে নতুন অফিস স্পেস নিয়েছে। তারা বর্তমানে স্টাফ সংখ্যাও বাড়িয়েছে। প্রায় ১৫০০ বা এরও বেশি স্টাফ মেম্বার ও প্রোডাক্ট ডেলিভারির জন্য ১৫,০০০ রেজিস্টার্ড হিরো কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটিতে।
শুরু থেকেই মার্কেটিং ও এডভার্টাইজিং এ অনেক খরচ করলেও ইভ্যালির গ্রোথ ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ ওয়ার্ড অফ মাউথ মার্কেটিং। মূলত তাদের ডিসকাউন্ট,ক্যাশ ব্যাক সহ লাগাতার ক্যাম্পেইন গুলোর কারণে ইভ্যালি ওয়ার্ড অফ মাউথ মার্কেটিং এর সুবিধা বেশ ভালো ভাবেই কাজে লাগাতে পেরেছে । যদিও ডেলিভারি পেতে দেরি হওয়া সহ আরও বিভিন্ন ধরনের অভিযোগের কারণে ইভ্যালি কে ঘিরে তৈরি হয়েছে কিছু নেগেটিভিটিও।
ইভ্যালির প্রোডাক্ট ডেলিভারি মডেল
দেশের প্রতিষ্ঠিত ই – কমার্স গুলোর বেশির ভাগেরই নিজস্ব লজিস্টিক নেটওয়ার্ক নেই। ইভ্যালি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই রাজধানীর ১৩ টি এলাকায় ২৬ টি এক্সপ্রেস শপ স্থাপন করার মাধ্যমে ২০২০ সালের ২৪শে মার্চ নিজস্ব লজিস্টিক নেটওয়ার্ক ইভ্যালি এক্সপ্রেস ডেভেলপ করেছে। ইতিমধ্যে দেশের ২৫ টির বেশী জেলায় ২০০ টির বেশি এক্সপ্রেস শপ তৈরি করা হয়েছে। প্রোডাক্ট ডেলিভারির ক্ষেত্রে ইভ্যালি অনেকটাই আমাজন এর মডেল ফলো করে।
এক্ষেত্রে অর্ডার পাওয়ার পর সেলারের কাছে থেকে প্রোডাক্ট প্রথমে ইভ্যালির ওয়ার হাউজে আসে। এরপর ওয়ার হাউজে থেকে প্রোডাক্ট এক্সপ্রেস বুথে পৌঁছে দেয়া হয় এবং সেখান থেকে রাইড শেয়ারিং মডেল ফলো করে সবথেকে কাছাকাছি থাকা ইভ্যালির ভেরিফাইড ডেলিভারি হিরোরা কাস্টমারের কাছে প্রোডাক্টটি পৌঁছে দেয়।
ইভ্যালির অন্যান্য সার্ভিস
ইভ্যালি তাদের বিজনেসকে শুধুমাত্র ই-কমার্সেই সীমাবদ্ধ রাখতে চায়নি। ইভ্যালি ছাড়াও তারা E-Food, E-Khata, E-Bazar এর মত আরো বেশ কিছু নতুন সার্ভিস নিয়ে এসেছে। ২০২০ সালের জুন মাসে E-Food চালু করার মাধ্যমে ইভ্যালি তার ফুড ডেলিভারি সার্ভিস চালু করে। শুরুতে ঢাকার বনানী, গুলশান ও ধানমন্ডি এলাকার মধ্যেই এর সার্ভিস সীমিত থাকলেও বর্তমানে পুরো ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রামেও ফুড ডেলিভারী সার্ভিস চালু করা হয়েছে।
বেশ কিছু জনপ্রিয় ফুড চেইন রেস্টুরেন্ট ইতোমধ্যেই ই – ফুডের পার্টনার হিসেবে যুক্ত হয়েছে। E-Food এর এমন পার্টনার রেস্টুরেন্টের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে৷ এছাড়া সম্প্রতি ক্লাউড ভিত্তিক ফুড কার্ট সার্ভিস Kludio এর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে ইভ্যালি। ইভ্যালির কাস্টমারেরা তাদের ক্যাশের পাশাপাশি ক্যাশব্যাকের ব্যালেন্স ব্যবহার করে ইফুডের মাধ্যমে খাবার অর্ডার করতে পারে৷ তাছাড়া বিভিন্ন কুপন ও ডিসকাউন্টের অফার তো আছেই। ফলে ফুড ডেলিভারিতে নতুন এসেও Food Panda ও Pathao Food এর মত প্রতিষ্ঠিত ফুড ডেলিভারি সার্ভিসকে ভালভাবে টক্কর দিতে পেরেছে E-Food সার্ভিস।
ইভ্যালি বিজনেস মডেল বিশ্লেষণ
ইভ্যালির সিইও মোঃ রাসেলের টার্গেট বাংলাদেশের সেরা ই-কমার্স হিসেবে ইভ্যালিকে প্রতিষ্ঠা করা। আর তাই শুরু থেকেই নিউ কাস্টমার রেজিস্ট্রেশন, সেলারদের ইভ্যালি প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসা সহ মার্কেট ডেভেলপমেন্টে বেশি ফোকাস করেছে তারা ৷ ডিসকাউন্ট ও বিভিন্ন অফারের মাধ্যমে শুধু কাস্টমার নয় সেলারদেরকেও নিজেদের প্ল্যাটফর্মে টেনে এনেছে ইভ্যালি। যদিও এতে করে সাধারন মানুষের মধ্যে একটা ধারনা জন্মেছে যে ইভ্যালি হয়তো অনেক বেশি পরিমানে লস করে।
ইনসেন্টিভ মডেল
আদতে প্রফিট করতে না পারলেও ইভ্যালির নেট লসের পরিমান এত বেশি পরিমানে হচ্ছেনা। ই-কমার্স ব্যবসায় শুরু থেকেই প্রফিট করতে হবে এমন পরিকল্পনা কারোরই থাকেনা। বরং ইন্টারন্যাশনাল সব বড় বড় জায়ান্টরাও শুরু থেকে বেশ কয়েক বছর লসের মাধ্যমে ব্যবসা প্রতিষ্ঠিত করেছে৷ ই-কমার্সের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য হচ্ছে ক্যাশ ফ্লো ঠিক রেখে কাস্টমারের সংখ্যা বাড়িয়ে যাওয়া। ইভ্যালির সিইও মোঃ রাসেলও বিভিন্ন সময়ে এমন কথাই বলেছেন।
প্রতিষ্ঠানটির বিজনেস মডেল পর্যালোচনা করলে এ বিষয়ে স্পষ্ট একটি ধারনা করা সম্ভব হবে। ইভ্যালির বিজনেস মডেল পর্যালোচনা করলে শুরুতে যে বিষয়টি আসবে সেটি হলো ইনসেন্টিভ মডেল।
শুরু থেকেই ইভ্যালি বিভিন্ন ডিসকাউন্ট, ক্যাশ ব্যাক ক্যাম্পেইন, ভাউচার অফার, গিফট কার্ড সহ নানা ধরনের ইনসেন্টিভ প্রদান করে কাস্টমারদের আকৃষ্ট করত। মূল দামের চেয়ে ডিস্কাউন্ট এর মাধ্যমে এভাবে প্রোডাক্ট বিক্রি করতে অনেক বেশি আগ্রহী ছিল তারা। ইভ্যালির ইনসেন্টিভ মডেলের ক্ষেত্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যাপার হচ্ছে এর ক্যাশব্যাক অফার৷
ইভ্যালি থেকে প্রোডাক্ট কিনলে ক্ষেত্রবিশেষে ১০% থেকে শুরু করে ৩০০% পর্যন্ত ক্যাশব্যাক পাওয়া যায়৷ ক্যাশব্যাক পেতে সাধারনত প্রোডাক্ট অর্ডার করে পেমেন্ট করে প্রোডাক্ট কনফার্ম করলেই ক্যাশব্যাকের টাকা কাস্টমারের ইভ্যালি ব্যালেন্সে জমা হয়। এই ব্যালেন্স দিয়ে পরবর্তীতে ইভ্যালি থেকেই অন্য প্রোডাক্ট কেনা যায়।
ইনসেন্টিভ মডেলের উদাহরণ
ইনসেন্টিভ মডেলের উদাহরণ বুঝতে হলে আপনাদের কিছুটা মাথা খাটানোর প্রয়োজন পড়বে। ধরা যাক, ১০০ টাকা মূল্যের একটি প্রোডাক্টে ১০০% ক্যাশব্যাক রয়েছে। অর্থাৎ প্রোডাক্টটি কিনলে ক্যাশব্যাক অফার হিসেবে ১০০ টাকা কাস্টমারের ইভ্যালি ব্যালেন্সে যোগ হবে।
ধরি, জনাব ফাহিম আহমেদ ইভ্যালির একজন কাস্টমার৷ তিনি ইভ্যালিতে ১০% ক্যাশব্যাকে ১০০ টাকার একটি প্রোডাক্ট কিনলেন। প্রথম প্রোডাক্টটিতে ইভ্যালির লাভ ছিল ১০% বা, ১০০ টাকায় ১০ টাকা। তাহলে ইভ্যালির খরচ ছিল ৯০ টাকা। ক্যাশব্যাক পাওয়ার পর মিস্টার ফাহিমের ইভ্যালি ব্যালেন্সে থাকলো ১০০ টাকা।
এখন, ক্যাশব্যাকের ব্যালেন্স শেষ করতে জনাব ফাহিম আবারো ইভ্যালি থেকে আরেকটি প্রোডাক্ট কিনতে আগ্রহী হবেন। তবে ইভ্যালির নিয়ম অনুযায়ী, নতুন অর্ডারে ৬০% এর বেশি ইভ্যালি ব্যালেন্স থেকে খরচ করা যাবেনা। অর্থাৎ নতুন অর্ডারে জনাব ফাহিম ক্যাশব্যাকের ব্যালেন্স থেকে ৬০% বা ৬০ টাকা খরচ করবেন। বাকী ৪০% বা ১০০ টাকায় ৪০ টাকা নতুন করে ইভ্যালিতে ইনভেস্ট করতে হবে।
নতুন প্রোডাক্টটিতেও যদি ইভ্যালি ১০% লাভ রাখে তাহলে ২ টি প্রোডাক্ট থেকে ইভ্যালির মোট খরচ হবে ৯০+৯০=১৮০ টাকা। অপরদিকে, ইভ্যালি জনাব ফাহিম এর কাছ থেকে ব্যালেন্স সংগ্রহ করেছিল ১০০+৪০=১৪০ টাকা। সে হিসেবে, ইভ্যালির নেট লসের পরিমান দাঁড়ায় ১৮০-১৪০=৪০ টাকা, অর্থাৎ মাত্র ২২%।
কিন্তু আপাত দৃষ্টিতে এমন লস মনে হলেও বিষয়টি কিন্তু তা নয়৷ প্রকৃত পক্ষে, তখনো কাস্টমারের ইভ্যালি ব্যালেন্সে আরো ৪০ টাকা থেকে যায়। এটি খরচ করতে আবারো কাস্টমার ইভ্যালি থেকে নতুন প্রোডাক্ট কেনেন এবং প্রতিবারে ৪০% করে নতুন ইনভেস্ট করেন। এভাবে দ্বিতীয়বার লাভ করতে না পারলে, তৃতীয় কিংবা চতুর্থবার কেনাকাটার ক্ষেত্রে ইভ্যালি লাভের মুখ দেখতে পারে৷
ইভ্যালি মূলত কাস্টমারদের মন – মানসিকতায় ক্যাশব্যাক ব্যবহার করে প্রোডাক্ট কেনার মানসিকতাকে জাগিয়ে দেয়৷ ক্যাশব্যাকে কাস্টমারেরা এ পরিমানে অভ্যস্ত হয়ে যায় যে, তারা নগদ টাকায় কেনাকাটা করলে যে পরিমাণে চিন্তা ভাবনা করত, ক্যাশব্যাকের ক্ষেত্রে সেই সেল্ফ কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলে। ফলে ইভ্যালির অর্ডারের সংখ্যা বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে তাদের প্রফিটের পরিমানও।
তাছাড়া অনেক প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে দেখা যায় ইভ্যালির প্রোফিটের পরিমাণ ১০% এর চেয়ে অনেক বেশি থাকে। ‘হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ’ এর একটি আর্টিকেল অনুযায়ী, নতুন কাস্টমারকে আকৃষ্ট করতে পুরনো কাস্টমার ধরে রাখার খরচের তুলনায় ২৫ গুণ পর্যন্ত বেশি টাকা খরচ হতে পারে৷ অন্যদিকে, কাস্টমার ধরে রাখার ক্ষেত্রে, মাত্র ৫% ধরে রাখতে পারলেও ব্যবসায় লাভের পরিমাণ ২০ থেকে ২৫% পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। ইভ্যালির ক্যাশব্যাক ইন্টেন্সিভ মডেল প্রতিষ্ঠানটির কাস্টমার ধরে রাখার হার বাড়াতে অনেক সাহায্য করেছে৷
Group Buying বা বাঞ্জি স্কিম মডেল
ইভ্যালি তার বিজনেসে মডেলে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে তা কিন্তু নয়৷ ইভ্যালির সিইও মোঃ রাসেল মূলত চায়নার কিছু বিখ্যাত ই-কমার্স মডেলকে ফলো করেছেন। এগুলোর মধ্যে একটি জনপ্রিয় স্ট্র্যাটেজি হচ্ছে Group Buying বা দলবদ্ধভাবে কেনা। এই স্ট্র্যাটেজিতে, অনেক বেশি পরিমানে কাস্টমার একই সাথে একটি প্রোডাক্ট অর্ডার করলে সেই প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়৷
ইভ্যালি মূলত বিভিন্ন ভাউচার অফার ও ক্যাশব্যাকের মাধ্যমে কাস্টমারদের কাছ থেকে প্রচুর পরিমানে টাকা অগ্রীম পেমেন্ট নিয়ে নেয়। এরপর ইভ্যালি ম্যানুফাকচারদের কাছে অনেক বেশি পরিমাণে প্রোডাক্ট একসাথে কিনতে চায়৷ তখন ব্র্যান্ডগুলো এত বেশি পরিমাণে প্রোডাক্টের অর্ডার পেয়ে তাদের প্রফিট মার্জিন অনেক কমিয়ে দেয় এবং বড়ধরনের ডিস্কাউন্টে তাদের প্রোডাক্টগুলো ইভ্যালির কাছে বিক্রি করে।
ম্যানুফ্যাকচারদের ক্ষেত্রে, প্রোডাক্টের দাম নির্ধারনের সময় বেশ কিছু জিনিষের খরচ হিসাব করতে হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে–
- Warehouse Cost
- Showroom Cost
- Transportation Cost
- Dealers Commission
- Salesperson Salary ইত্যাদি।
ফলে পাইকারি দামে বিপুল পরিমানে প্রোডাক্ট বিক্রি করে দিতে পারলে ম্যানুফ্যাকচারারদের
এমন কিছু আনুষাঙ্গিক খরচ বেঁচে যায়৷ ফলে ইভ্যালিকে ডিসকাউন্ট দিয়ে প্রোডাক্ট বিক্রি করলেও ব্র্যান্ডগুলো তাদের প্রফিট ঠিকই বজায় রাখতে পারে। পাশাপাশি ইভ্যালিও কিছু লাভ করতে পারে।
ইভ্যালি প্রি-অর্ডার মডেল
এই Group Buying মডেলের অংশ হিসেবেই ইভ্যালি মূলত Pre-Order নিয়ে থাকে৷ বিশ্ব জুড়ে প্রি-অর্ডার ভিত্তিক কেনাকাটা খুব সাধারন হলেও বাংলাদেশে এটি কখনোই জনপ্রিয় ছিলনা৷ তবে ইভ্যালিই প্রথম এই পদ্ধতির সফল প্রয়োগ দেখিয়েছে। এই মডেল ফলো করেই ইভ্যালি তার ব্যবসার শুরুর দিকে হোম এপ্লায়েন্স, ইলেক্ট্রনিক্স, ল্যাপটপ, গাড়ি সহ যেসব প্রোডাক্ট মুহুর্তের মধ্যেই জরুরি দরকারী না সেসব প্রোডাক্টের উপর বিপুল পরিমাণে ক্যাশব্যাকের অফার দিচ্ছিল। যেহেতু এসব প্রোডাক্ট নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মধ্যে পড়েনা তাই কিছু সময় অপেক্ষার পর প্রোডাক্ট পেয়ে যদি বড় এমাউন্টের ক্যাশ ব্যাক বা ডিসকাউন্ট পাওয়া যায় তাহলে কাস্টমারেরই সুবিধা। সে ধারনা থেকেই ইভ্যালি তাদের প্রি অর্ডারের ধারনাটি কিছুটা চাতুরতার সাথে বাস্তবায়ন করেছে৷
কম দামী প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে ইভ্যালি বেশিরভাগ চাইনিজ ই-কমার্স গুলোকে ফলো করে। তারা অনেক বেশি পরিমাণে প্রোডাক্ট কিনলে ডিস্কাউন্টের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় একই প্রোডাক্টের পরিমাণ বাড়িয়ে বান্ডেল তৈরি করে। এরপর সেই বান্ডেল প্যাকের উপরে ডিস্কাউন্ট অফার করে। যার ফলে কাস্টমারেরা শুধুমাত্র এই অফার নেওয়ার জন্যই তাদের প্রয়োজনের চেয়ে অত্যধিক পরিমাণে প্রোডাক্ট অর্ডার করে।
ইভ্যালির সাপ্লায়ার চেইন মডেল
একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কাস্টমারের পাশাপাশি প্রোডাক্টের সাপ্লাইয়ার রাও অনেক বড় একটি উপাদান৷ ইভ্যালির সাপ্লায়ার মডেলকে বিশ্লেষন করলে এদের তিন ক্যাটাগরির সাপ্লায়ার রয়েছে৷ তারা হলো–
১৷ তুলনামূল বড় ব্র্যান্ডের সাপ্লায়ার৷ এরা নিজেদের স্টোর নিজেরাই ম্যানেজ করে। ইভ্যালির মাধ্যমে অর্ডার নিয়ে এরা প্রোডাক্ট বিক্রি করে থাকে।
২। তুলনামূলক মধ্যম মানের ব্র্যান্ডগুলো। এদের স্টোর তৈরির ব্যাপারটি ইভ্যালি নিজেই ম্যানেজ করে থাকে।
৩। ছোট ফিজিক্যাল শপ। যেসব সাপ্লায়ার এর ফেসবুকে বিজনেস বা ছোটখাটো ফিজিক্যাল শপ আছে তাদের ইভ্যালিতে ব্যবসা খোলার সুযোগ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ইভ্যালি মধ্যস্থতাকারী হিসেবে অর্ডার নেয় এবং এসব দোকান থেকে মানুষ প্রোডাক্ট কিনে থাকে।
সাপ্লাই চ্যানেলে ইভ্যালির সবচেয়ে বড় সফলতা বলা যেতে পারে ইভ্যালির গ্রোসারি শপ চালু করা। ইভ্যালি গত বছর গ্রোসারি, ফিশ ও মিট সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সেকশন চালু করে। এসময়ে ইভ্যালিতে বড় বড় গ্রোসারি ব্র্যান্ড যেমন Swapno, Meena Bazar, UniMart, Bengal Meat সহ ছোট ছোট মুদি দোকানদার ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও ইভ্যালি প্ল্যাটফর্মে যোগ দেয়। ফলে ইভ্যালির সাপ্লাই প্ল্যাটফর্ম সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী হয়ে উঠে।
ইভ্যালি এক্সপ্রেস- গ্রামাঞ্চলে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ
বাংলাদেশের বেশিরভাগ লোক গ্রামে বাস করে। দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের সাথে সাথে গ্রামাঞ্চলে আধুনিকতার ছোয়া লেগেছে। ফলে তাদের ক্রয় ক্ষমতাও বেড়ে গেছে। এখন গ্রামের মানুষ ইলেট্রনিক্স প্রোডাক্ট– যেমন টিভি, ফ্রিজ, মোবাইল সহ নানা ধরনের প্রোডাক্ট নিয়মিত ক্রয় করছে৷ তবে বাংলাদেশের কোনো ই-কমার্স সাইটই গ্রামের মানুষের কাছে তাদের সেবা পৌছে দিতে পারেনি৷ ইভ্যালি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই জেলা শহরে পৌছে গেছিল৷ এরপর তারা জেলা শহর পার হয়ে উপজেলা ও গ্রামের বাজার পর্যন্ত পৌছে গেছে। ফলে তাদের অর্ডারে বেশ বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে৷
সিইও এর গুড ইমেজ
জাতি হিসেবে আমরা অনেক বেশি আবেগপ্রিয়৷ উপমহাদেশের প্রতিটি জায়গার মানু্ষকেই যদি আবেগের মাধ্যমে কোনো জিনিষে যোগ দিতে বলা হয় তাহলে সেটির প্রতি মানুষের আগ্রহ এমনিতেই কয়েক গুণ বেশি থাকে৷ শুরু থেকেই ইভ্যালিত সিইও মোঃ রাসেল ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে বিভিন্ন অফারের ঘোষনা দিতেন। তাছাড়া ইভ্যালির মূল অগ্রাধিকার যে শুধুমাত্র কাস্টমারেরা সেই বার্তাটি তিনি সব সময়ই পৌছে দিতেন।
পাশাপাশি কাস্টমারদের মতামতের ভিত্তিতে যেসব প্রোডাক্টে তারা অফার চাইতেন, ইভ্যালি সেসব প্রোডাক্টের অফার এনে দেওয়ারই চেষ্টা করতেন। কাস্টমারদের সাথে কোম্পানির সিইও এর এমন সরাসরি জড়িত থাকার ব্যাপারটি সবাই খুব ভালভাবে গ্রহন করে নিয়েছিল৷ এ ব্যাপারটি মূলত কাস্টমারদেরকে নিজেদের ক্ষমতাবান ভাবতে সাহায্য করেছে। তাছাড়া ডেলিভারি সংক্রান্ত জটিলতা সহ যেকোনো ধরনের ভুলের ক্ষেত্রে তিনি সরাসরি লাইভে এসে নিজের ভুল স্বীকার করে নিয়েছেন।
ই-কমার্স সহ বাংলাদেশের বেশিরভাগ ব্যবসার ক্ষেত্রেই এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি অনেক কমই দেখা যায়। ফলে ইভ্যালির একটি লয়্যাল ফ্যানবেস ও কাস্টমার গ্রুপ গড়ে উঠেছে। এই লয়্যাল ফ্যান গ্রুপ পরবর্তী ইন্টারনেটসহ সব জায়গায় ইভ্যালির বিরুদ্ধের প্রচারনাগুলোর বিপক্ষে দাঁড়াত এবং প্রচারনার কাজটিও করত। তাছাড়া বিতর্কের সৃষ্টি হওয়ার পর ইভ্যালির সিইও নিজেই বিভিন্ন টিভির প্রোগ্রাম, পত্রিকার ইন্টারভিউ সহ ফেসবুক লাইভে এসে প্রতিনিয়ত আপডেট দিয়েছিলেন।
২০২০ সালের ৩০ নভেম্বরে ইভ্যালির সিইও নিজেই কাস্টমারদের বাসায় গিয়ে ফুড ডেলিভারি করেছে। সিইও এর এমন ফুড ডেলিভারিতে অংশগ্রহণ ইভ্যালি নিয়ে কাস্টমারদের মধ্যে চমক ও ইতিবাচক আবেগ সৃষ্টি করেছে৷
ইভ্যালির ডিস্কাউন্ট অফার এর নেপথ্যে কী
অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে ইভ্যালি এত অফারের মাধ্যমে প্রোডাক্ট বিক্রি কিভাবে করে? প্রথমেই বলা রাখা ভালো, ইভ্যালির সব প্রোডাক্টে কিন্তু ডিস্কাউন্ট বা ভাউচার অফার নেই। অফার ছাড়াও ইভ্যালি অনেক প্রোডাক্ট বিক্রি করে৷ তাদের ক্যাশব্যাকের অফার মূলত বিভিন্ন হোম এপ্লায়েন্স, ইলেট্রনিক্স, অটোমোবাইল প্রোডাক্টসমূহের কিছু পুরাতন মডেল গুলোর ব্যাপারে থাকে।
উদাহরণ হিসেবে ইভ্যালি তে Samsung এর স্টোরে ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন ও টিভির যে মডেল গুলোতে ডিস্কাউন্ট অফার রয়েছে সেগুলোকে ধরা যায়। খেয়াল করলে দেখবেন, এগুলোর বেশিরভাগই বেশ কয়েকবছর আগের মডেলের প্রোডাক্ট৷ নতুন মডেল বাজারে আসার কারনে এই মডেল গুলোর বিক্রি হয়তো কিছুটা কমে গেছিল। সাধারন সাপ্লাই চেইনের মাধ্যমে শোরুমে এসব ইউনিট বিক্রি করাটা বেশ সময় সাপেক্ষ একটি ব্যাপার। তাই এ ধরনের প্রোডাক্টগুলো জলদি বিক্রি হয়ে কারখানা খালি করে নতুন প্রোডাক্ট মডেলের প্রোডাক্ট তৈরি করার জন্য ইভ্যালির এই ক্যাশব্যাক ও ডিস্কাউন্ট অফার ব্র্যান্ড ও রিটেইলার উভয়ের জন্যই বেশ ভাল সুযোগ।
এছাড়া গাড়ি ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রায়ই দেখা যায় যে রিটেইলাররা রি-কন্ডিশনের গ্রেডের দিক থেকে নিম্নমানের গাড়িগুলোকে উচ্চ মূল্যে লিস্টিং করে বড় ধরনের ডিস্কাউন্ট দেয়। যদিও বিভিন্ন দোকান বা ডিলারের নিকট থেকে গাড়িটি ক্রয় করলে হয়তো গাড়িগুলো মোটামুটি এই দামেই পাওয়া যেত৷ ল্যাপটপের ক্ষেত্রেও ২/৩ বছর আগের ওল্ড জেনারেশন প্রসেসরের ল্যাপটপের ক্ষেত্রেই এই ডিস্কাউন্ট দেওয়া হয়।
ইভ্যালির ভবিষ্যৎ
খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ইভ্যালি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও সাম্প্রতিক কিছু বিতর্কের কারনে অনেক নামীদামী ব্র্যান্ডই ইভ্যালিতে তাদের প্রোডাক্ট আর শো-কেস করছেনা। এছাড়া বেশ কয়েকবারই ইভ্যালি এমাজন থেকে বেশ বড় এমাউন্টের ইনভেস্টমেন্ট পাচ্ছে এমন গুঞ্জন উঠলেও পত্র-পত্রিকাতে ইভ্যালির ফান্ডিংস নিয়ে কোনো তথ্য নেই বললেই চলে। সুতরাং প্রতিষ্ঠানটির ক্যাশ ফ্লো নিয়ে এখনো বেশ বড় রকমের ধোয়াশা থেকেই গেছে।
তাছাড়া সরকার বর্তমানে ই-কমার্স ব্যবসায় কাস্টমারদের নিরাপত্তা দিতে একটি গাইডলাইন তৈরি করছে। এসব কিছুর মধ্যে ইভ্যালি চাইনিজ ই-কমার্সগুলোর মত সফল হতে পারবে কিনা, ইভ্যালি একটি সাসটেইনেবল বিজনেস মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে কিনা সেটিই এখন দেখার বিষয় ।