সার্চ ইঞ্জিন কি? সার্চ ইঞ্জিন কিভাবে কাজ করে?
আমরা যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করি তাদের একাংশের মূল লক্ষ্যই হলো বিভিন্ন প্রয়োজনে দরকারি তথ্য খুঁজে নেওয়া এবং সেই তথ্যকে কাজে লাগিয়ে নিজ নিজ ক্ষেত্রে পূর্বের চাইতে আরো উত্তম কিছু করতে পারা। এক্ষেত্রে আমাদের তথ্য অনুসন্ধানের ধরণটাও অনেকসময় ভিন্ন হয়। যেমন কেউ কেউ সরাসরি ওয়েব এড্রেস লিখে তার প্রয়োজনীয় ওয়েবসাইট সার্চ করে। আবার কেউ কেউ এই ঝামেলায় নিজেকে না জড়িয়ে শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় কিওয়ার্ড লিখেই সার্চ বারে ক্লিক করে। তবে যে যেভাবেই সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করুক না কেনো সকলেরই মূল উদ্দেশ্য থাকে তথ্য খুঁজে নেওয়া। গ্রাহকের প্রয়োজন অনুসারে সার্চ ইঞ্জিন সেই তথ্য এক ক্লিকেই সামনে হাজির করে।
আমরা যারা সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করি এবং এর প্রতি খুব আগ্রহ দেখাই তারা নিশ্চয় জানি যে বর্তমানে Google, Bing এবং ইয়াহু সার্চ ইঞ্জিন সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তার অধিকারী। আমাদের যাপিত জীবনের সকল সমস্যার সমাধান জানার জন্য একটি মাধ্যমের প্রয়োজনীয়তাকে কখনোই অস্বীকার করা যাবে না। পাশাপাশি খুব সহজেই এবং হাতের মুঠোয় তথ্যপ্রাপ্তির সুযোগটাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা জীবনকে সহজ করে তোলার জন্য এই সুযোগের প্রয়োজন। যার ফলস্বরূপ বর্তমানে আমাদের মতো ইন্টারনেট ব্যবহারকারী এবং ওয়েব ডেভেলপারদের কাছে সার্চ ইঞ্জিনের গুরুত্ব অনেক বেশি।
সার্চ ইঞ্জিন কি?
সার্চ ইঞ্জিন হলো মূলত আমরা ইন্টারনেটে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়ার জন্য আমাদের ব্যবহার করা সফটওয়্যার বা মেশিন। এই সার্চ ইঞ্জিনই পূর্বে আপলোড করা বিভিন্ন ব্লগ থেকে আমরাদের প্রয়োজনীয় ব্লগ বা তথ্য খুঁজে দেওয়ার কাজটি করে থাকে। সাধারণত ওয়েব ব্রাউজারের মাধ্যমে সার্চ ইঞ্জিন এই কাজটি করতে সক্ষম হয়। সুতরাং আশা করি আমরা সার্চ ইঞ্জিন সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা অর্জন করতে পেরেছি। এবার এই টপিক সম্পর্কিত বাকি আলোচনাগুলি বুঝতেও বেশ সুবিধা হবে। আসুন পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ে সার্চ ইঞ্জিনের অদ্যোপান্ত সম্পর্কে জেনে নিই।
সার্চ ইঞ্জিন কিভাবে কাজ করে?
সহজ কথায় বলতে গেলে সার্ভারে জমিয়ে রাখা পূর্বের কোটি কোটি ওয়েবপেইজ এবং ব্লগ থেকে আপনার প্রয়োজনীয় কিওয়ার্ড অনুযায়ী কন্টেন্ট হাজির করাই হলো সার্চ ইঞ্জিনের মূল কাজ। এবার একটু গভীরে আসা যাক। সার্চ ইঞ্জিনের ধরণে যেমন ভিন্নতা রয়েছে, তেমনই এর তথ্য সংগ্রহকারী সফটওয়্যারেরও ভিন্নতা রয়েছে। অর্থ্যাৎ সকল সার্চ ইঞ্জিনের তথ্য সংগ্রহ করা সফটওয়্যারটি মোটেও একই নয়।
এই ধরণের সফটওয়্যার বর্তমানে তিনটি নামে পরিচিত। সার্চ ইঞ্জিনের ভাষায় এই তথ্য সংগ্রহকারী সফটওয়ারগুলি ওয়েব ক্রলার, রোবট, বট নামে পরিচিত। এই সফটওয়্যার প্রতিনিয়ত অনলাইনে ঘোরাঘুরি করে বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সার্ভারে জমা করে। যার ফলস্বরূপ আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় কিওয়ার্ড ব্যবহার করে সার্চ দেওয়ার সাথে সাথে তথ্য পেয়ে যাই।
কিভাবে সার্চ ইঞ্জিন তথ্য সংগ্রহ করে?
এই প্রশ্নটি অনেকের কাছেই বেশ ধোঁয়াশা মনে হয়! অনেকের মতে এর উত্তর হয়তো বেশ কঠিন। কারণ সার্চ ইঞ্জিনের কাজ সম্পর্কে অনেকের মনেই ভীতি রয়েছে। তবে আশা করছি এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি সার্চ ইঞ্জিনের তথ্য সংগ্রহ করার প্রসেস সম্পর্কে পরিষ্কার হতে পারবেন। প্রথমে এই ব্যাপারে একটি প্রচলিত ভুল ধারণা ভেঙে দেওয়া জরুরি। অধিকাংশ ব্যবহারকারী মনে করে আমরা গুগলে যা অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে যা যা সার্চ দিই সব তথ্যই আমাদের গুগল মামার তরফ থেকে পাওয়া। আদতে তা মোটেও সঠিক নয়।
একটু লক্ষ্য করলে দেখবেন ইন্টারনেট বা গুগলে এমন কোনো বিষয় নেই যা সম্পর্কে আলোচনা করা হয় নি। পাশাপাশি গুগল যথেষ্ট বড় একটি কোম্পানি হলেও তার একার পক্ষে কখনোই এত তথ্য সম্পর্কে কন্টেন্ট তৈরি করা সম্ভব নয়। সুতরাং যাদের ধারণা গুগল নিজেই এসব কন্টেন্ট তৈরি করে তাদের ধারণা পুরোপুরি ভুল। সঠিক তথ্য হলো বিভিন্ন ওয়েবসাইটের যৌথ সমন্বয়ে তৈরি হয় সার্চ ইঞ্জিনের ডাটাবেজে থাকা কোটি কোটি কন্টেন্টের৷
এই তো গেলো…আমাদের সামনে শো করা কন্টেন্ট সম্পর্কে ভুল ধারণার অবসান। এবার আসা যাক সার্চ ইঞ্জিনের কার্যক্রম সম্পর্কে। আমরা অনেকেই ওয়েবসাইট সম্পর্কে টুকটাক হলেও জানি। ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিভিন্ন ব্লগ, কন্টেন্ট খুঁজে বের করে সার্চ ইঞ্জিনের ডাটাবেজে জমা করে ক্রলার। সেই জমা করা তথ্য থেকেই আমরা মূলত আমাদের প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম হই। ব্যাপারটি খুবই সহজ। না জানার কারণেই হয়তো আমাদের এই দূর্বলতা।
সার্চ ইঞ্জিনের তথ্য সংগ্রহ করার ধাপসমূহ কি কি?
শুধুমাত্র ক্রলিংয়ের সাহায্যে যে আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত তথ্যসমূহ পেয়ে যাই তা কিন্তু নয়। এই তথ্যপ্রাপ্তির পেছনে আরো কিছু প্রসেস কাজ করে৷ সার্চ ইঞ্জিনের এই তথ্য সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে ৩ টি ধাপের প্রয়োজন পড়ে। নিচে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ-
- ক্রলিংঃ- প্রথমেই আসা যাক ক্রলিংয়ের প্রসেসে। এটি মূলত সার্চ ইঞ্জিনের তথ্য সংগ্রহ করার সর্ব প্রথম ধাপ৷ এর মূল কাজ হলো বিশ্বের বিভিন্ন ধাচের ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট থেকে অসংখ্য তথ্য সংগ্রহ করা। একটি ওয়েবপেইজে থাকা সকল তথ্য, ইমেইজ, ভিডিওসহ সব কন্টেন্ট সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে সার্চ ইঞ্জিনের এই ক্রলিংটি ব্যবহৃত হয়। এই সফটওয়্যারটি প্রায় প্রতিটি ওয়েবসাইটেই রয়েছে। নতুন কন্টেন্টের লিংক সংগ্রহ করার পাশাপাশি এটি পুরোনো অকার্যকর কন্টেন্ট মুছে ফেলে। পাশাপাশি যদি পূর্বের কোনো কন্টেন্ট এডিট করা হয় সেই তথ্যের খবরও এই সফটওয়্যারটি সংগ্রহ করে রাখে। আজব হলেও সত্যি যে যদি আপনি কখনো আপনার ওয়েবসাইটে কন্টেন্ট পাবলিশ করা বন্ধ করে দেন তারপরও এই ক্রলিং সফটওয়্যারটি নিয়মিত আপনার ওয়েবসাইট ভিজিট করবে।
- ইনডেক্সিংঃ- কেমন হবে যদি পৃথিবীর সকল কন্টেন্টগুলিকে এলোমেলোভাবে একসাথে করা হয়? নিশ্চিয় খুবই বিরক্তিকর মনে হবে! কারণ প্রয়োজনীয় কন্টেন্ট ব্যাতিত অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় কন্টেন্ট পেইজের সামনে চলে আসলে অনেকসময় প্রয়োজনীয় কন্টেন্টই খুঁজে পাওয়া যাবে না। আবার আমরা নিজেরাও কি কখনো সার্চ ইঞ্জিনে একসাথে অনেক ধরণের কন্টেন্ট শো করতে দেখি? যেমন মোটরবাইক কিওয়ার্ডে সার্চ দেওয়ার পর কি আমরা কখনো মোবাইল ফোন সম্পর্কিত কন্টেন্ট শো করতে দেখেছি? একদমই না। এই ‘না’ এর কাজটি করে সার্চ ইঞ্জিনের ইনডেক্স করার ধাপটি৷ এটি পৃথিবীর অসংখ্য কন্টেন্ট থেকে ক্যাটাগরি অনুযায়ী তাদের সাজিয়ে রাখে। যাতে করে পরবর্তীতে গ্রাহকের কোনো ভোগান্তিতে পড়তে না হয়।
- ফলাফল প্রদানঃ- সার্চ ইঞ্জিনের তথ্য সংগ্রহ করার সর্বশেষ ধাপ হলো এটি। এই ফলাফল প্রদানের কাজ সম্পর্কে অনেকেই জানেন। এর মূল কাজ হলো প্রয়োজনীয় কন্টেন্টগুলি কিওয়ার্ড অনুযায়ী পেইজে শো করা৷ স্পাইডার, রোবট এবং অন্যান্য প্রোগ্রামের সাহায্যে হাইপারলিংক হিসেবে বিবেচিত হওয়া কনটেন্টগুলিকে সংগ্রহ করে তা গ্রাহকের সামনে পেশ করা হয় এই ধাপে৷
জনপ্রিয় কিছু সার্চ ইঞ্জিনঃ-
বর্তমানে সার্চ ইঞ্জিনের সংখ্যার ধীরে ধীরে বাড়ছে। যদিও এর জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারছে গুটিকয়েক সার্চ ইঞ্জিন। অনলাইনভিত্তিক কর্মজীবন নিয়ে স্বপ্ন দেখুক কিংবা না দেখুক অন্তত সাধারণ জ্ঞানের পাল্লা ভারি করতে হলেও এসব জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত।
গুগল (Google)
বাচ্চা থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের এই গুগল সম্পর্কে জানার খবরই জানান দিচ্ছে এই জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিনটির কদর। হালের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই আমেরিকান বহুজাতিক প্রযুক্তি কোম্পানি এবং সার্চ ইঞ্জিনটি ১৯৯৮ সালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী তৈরি করেন।
ইয়াহু (Yahoo)
এটিও নিজ সক্ষমতা বলে তার জনপ্রিয় ধরে রাখতে পেরেছে। এটি একটি সার্চ ইঞ্জিন হলেও পাশাপাশি এটি একটি বাণিজ্যিক কোম্পানির তালিকাতেও পড়ে। ১৯৯৪ সালের জানুয়ারি মাসে ডেভিড ফিলো ও জেরি ইয়াং ইয়াহু এর হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয় এই জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিনটির।
Bing সার্চ ইঞ্জিন
এই ওয়েব সার্চ ইঞ্জিনটি মূলত মাইক্রোসফট নিয়ন্ত্রণ করে থাকে এবং এটি পুরোপুরি এএসপি ডট নেট ব্যবহার করে তৈরি কর। বর্তমানে এটি আবার ‘ডিসিশন ইঞ্জিন’ বলেও পরিচিত।
শেষকথা
একজন সফল ব্লগার হওয়ার পেছনে এই সার্চ ইঞ্জিনের গুরুত্ব রয়েছে। আপনার ওয়েবপেইজ যত বেশি সার্চ ইঞ্জিনের প্রথমে থাকবে আপনি তত বেশি সফল হতে পারবেন। আশা করি উপরের আর্টিকেলটি আপনার এই সফলতার পেছনে কিছুটা হলেও কাজে দিবে।