ওয়েব ডিজাইন কি? কেন ওয়েব ডিজাইন শিখবেন?
লেখক: সুলতানা আফিয়া তাসনিম
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কাজ শেখার আগে কিংবা কাজ শেখার সময় আমাদের মাথায় আয় করার চিন্তাভাবনা ঘুরপাক খায়। তবে এই রীতি কেবল বাঙালিদের ক্ষেত্রেই ঘটে। যেখানে ১৪/১৫ বছর ধরে পড়াশোনা শেষ করার পরেও ভালো একটি চাকরি পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকে না সেখানে আমরা বাঙালিরা ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে ২/৩ মাস কোর্স করার পর কিংবা কাজ শেখার পরপরই লাখ লাখ টাকা ইনকামের স্বপ্ন দেখি। যা নিতান্তই বোকামি। যেখানে ১৪/১৫ বছর পড়াশোনা করেও চাকরি পাওয়াটা অসম্ভব হয়ে যায়, সেখানে ২/৩ মাস কোর্স করে লাখ লাখ টাকা ইনকাম করার স্বপ্ন হাস্যকর ঠেকে বটে।
তবে এটা ঠিক যে বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং সেক্টর একজন স্বপ্নবাজ মানুষকে তার গন্তব্যে পৌঁছে দিতে সক্ষম। যাদের প্রযুক্তির দিকে বাড়তি আগ্রহ রয়েছে কিংবা ফ্রিল্যান্সিং করার স্বপ্ন যাদেরকে রাতে ঘুমাতে দেয় না তাদের জন্য সাফল্যের হালখাতাটা আগে থেকেই খোলা। কেবল সেখানে সফলতার অংক কষতে হবে। নিজেকে সেরা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে দেখার জন্যে উঠে পড়ে লাগতে হবে। ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরের অনেক বড় একটি অংশ জুড়ে ওয়েব ডিজাইনিংয়ের অবদান রয়েছে।
বর্তমানে হালের সবচেয়ে জনপ্রিয় সেক্টর হলো এই ওয়েব ডিজাইনিং। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নিয়ে ঘরে বসে খুব সহজে ভালো মানের অর্থ আয় করতে চাইলে আমি বলবো ওয়েব ডিজাইনিংকে সফলতার সিঁড়ি হিসেবে বেছে নিতে। পাশাপাশি এই যুগে ওয়েব ডিজাইনিং সম্পর্কে টুকটাক ধারণা থাকাটাও যে কত বড় একটি স্কিল তা কেবল এই স্কিলটির প্রয়োজনের সময়ই বোঝা যাবে। অনেকেই ওয়েব ডিজাইন সম্পর্কে বিস্তারিত না জানার কারণে সামনে আগাতে পারেন না। ঠিক এই দলের ব্যাক্তিদের জন্য আজকের আমার এই আর্টিকেলটি। পাশাপাশি যারা এ সম্পর্কে জানেন আশা করি তারাও কিছু নতুন তথ্য পেয়ে উপকৃত হতে পারবেন।
ওয়েব ডিজাইন কি?
এই প্রশ্নের উত্তর হিসেবে যদি এক কথায় কোনো বাক্য বলতে হয় তাহলে আমি বলবো ওয়েব ডিজাইন হচ্ছে একটি ওয়েবসাইটের বাহ্যিক রূপ নির্ধারণ করা। আরেকটু খোলাসা করে যদি বলতে হয় তাহলে বলবো ওয়েব ডিজাইন হলো আপনার ওয়েবসাইটটিকে বাইরে থেকে কেমন দেখাবে, এর কালার কম্বিনেশন কেমন হবে ইত্যাদি নির্ধারণ করা। অনেকেই ওয়েব ডেভেলপমেন্টের কাজ এবং ওয়েব ডিজাইনের কাজকে একই কাজ বলে মনে করেন। যা একেবারেই ভুল। কারণ এই দু’টো সেক্টরের কাজ একেবারেই আলাদা আলাদা। আশা করি পুরো আর্টিকেলটি আপনার এই ভুল ভাঙতে সাহায্য করবে।
আমরা যেমন ফেইসবুক ব্যবহার করি, ঠিক তেমন একটি ওয়েবসাইট কোম্পানি কিংবা যেকোনো সার্ভিসের জন্য তৈরি করা হয়। এই ওয়েবসাইটটি দেখতে কেমন হবে কিংবা কিভাবে সাজালে সুন্দর হবে তা ঠিক করে ওয়েবসাইটটিকে সেই অনুযায়ী সাজানোকেই মূলত এই ওয়েব ডিজাইন বলা হয়৷ একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে গ্রাহক যেমন প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে পারে তেমনই একটি ইউনিক এবং রুচিসম্মত ডিজাইনের ওয়েবসাইট আপনার গ্রাহকের মনে আপনার সার্ভিস নিয়ে খুব সুন্দর এবং পরিপাটি একটি ধারণার সৃষ্টি করবে। যা এই অনলাইনে আয় করার ক্ষেত্রে ম্যাজিকের মতো কাজ করবে।
কেন ওয়েব ডিজাইন শিখবেন?
একটু ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখবেন বর্তমানে বেশিরভাগ ব্যাক্তি কিংবা কোম্পানি ওয়েবসাইট তৈরির দিকে ঝুঁকে পড়ছে। যা ভবিষ্যতে এই খাতে প্রচুর অর্থ আয় করার সুযোগ জানান দিচ্ছে। নিউজ সাইট, ই-কমার্স সাইটসহ নানান ধরণের সাইট তৈরির প্রবণতা বাড়ছে। একটা সাইট তৈরির ঠিক পরের ধাপ হিসেবে ওয়েব ডিজাইনিং সেক্টরকে ধরা হয়। তাই আপনি যদি ওয়েব ডিজাইনিংকে আপনার ক্যারিয়ারে সফলতা লাভের সিঁড়ি হিসেবে ভেবে থাকেন তাহলে আপনি মোটেও কোনো ভুল করেননি৷
আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলি একটু ঘাটাঘাটি করেন তাহলে বুঝবেন অনলাইনভিত্তিক কাজের কোনো শেষ নেই। কেবল প্রয়োজন দক্ষতার। ওয়েব ডিজাইনিং মোটামুটি ভালো মানের অর্থ আয় করিয়ে দিতে পারে আপনাকে। যেহেতু এই সেক্টরটিতে ভালো পরিমান আয় হয় সেহেতু এই কাজটি শিখতেও যথেষ্ট সময় এবং চর্চার প্রয়োজন। আপনি যত চর্চা করবেন তত নিজেকে ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে পারবেন।
বেশ ভালো পরিমাণ অর্থ আয় করতে পারার এই দারুণ সেক্টরটিতে বর্তমানে খুব কম সংখ্যক মানুষই জড়িত। বলতে গেলে বাংলাদেশে ওয়েব ডিজাইনারের সংকট বেশ লক্ষণীয়। পাশাপাশি যারা কাজ করছেন তারাও অনেক সময় অদক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন। ফলে যারা সময় দিয়ে ভালোভাবে কাজটি শিখতে পারবেন তাদের ভবিষ্যতে কাজের কোনো অভাব হবে না। এই সুবিধাটিকে আমি ওয়েব ডিজাইনিং শেখার অন্যতম সেরা একটি কারণ হিসেবে ভাবি। কারণ অনেকক্ষেত্রেই পরবর্তীতে কাজ না পাওয়ার কারণে অনেক ফ্রিল্যান্সার হতাশ হয়ে পড়েন।
কিভাবে শিখবেন?
এতক্ষণ শুধু ওয়েব ডিজাইনিং শেখার সুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করলাম। এবার কিভাবে ওয়েব ডিজাইনিং শেখা যায় সে সম্পর্কে আলোচনা করা যাক। বর্তমান সময়টাতেও বাংলাদেশে ওয়েব ডিজাইনিং শেখানোর মতো দক্ষ প্রশিক্ষক এবং প্রতিষ্ঠানের অভাব পরিলক্ষিত হয়। যা খুবই হতাশাজনক। তাই বলে কি আপনি হাল ছেড়ে দিবেন? ওয়েব ডিজাইনিং শেখার ইচ্ছাটা একটুকুতেই শেষ হয়ে যাবে? মোটেও না। চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
- বর্তমানে ইন্টারনেটে পাওয়া যায় না এমন কোনো বিষয় নেই। আপনার চাহিদা অনুযায়ী আপনার প্রয়োজনীয় সকল তথ্য মুহুর্তেই হাজির হবে আপনার সামনে। ওয়েব ডিজাইনিং শেখার ক্ষেত্রে এই সুযোগটিকে কাজে লাগানো যায়। একটু ঘাটাঘাটি করলেই দেখবেন ইন্টারনেটে ওয়েব ডিজাইনিং সম্পর্কে অসংখ্য কন্টেন্ট রয়েছে। পছন্দ মতো যেকোনো একটি ফ্রি কিংবা প্রিমিয়াম কোর্সে অংশগ্রহণ করে ফেলতে পারেন।
- সরাসরি প্রশিক্ষণ নিয়েও আপনি ওয়েব ডিজাইনিং শিখতে পারেন। মূলত আমরা সরাসরি যা শিখি তা আমাদের মাথায় বেশিদিন স্থায়ী হয়। যদিও বর্তমানে এই সেক্টরে ভালো প্রশিক্ষকের বড্ড অভাব। তবে আপনি চাইলে গুগলের সাহায্যেই বাংলাদেশেই আপনার জেলার সেরা কোনো সেন্টারের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
ক্যারিয়ার হিসেবে ওয়েব ডিজাইনিং কেমন?
ক্যারিয়ার হিসেবে ওয়েব ডিজাইনিং কেমন তার উত্তর দিতে হলে আমি বলবো এটি একটি পারফেক্ট সিদ্ধান্ত। যারা ঘরে বসে স্মার্ট আয় করতে চান, নিজের ক্রিয়েটিভিটিকে ছড়িয়ে দিতে চান, যাদের ডিজাইনিং দক্ষতা উচ্চ পর্যায়ের, যাদের ডিজাইনিং ভালো লাগে তাদের জন্য ওয়েব ডিজাইনিং হতে পারে সফলতা লাভের অন্যতম সেরা একটি মাধ্যম। এক্ষেত্রে বলে রাখা জরুরি যে দ্রুত কিংবা রাতারাতি আয় করতে চাওয়ার ইচ্ছে থাকলে এই সেক্টরটি ততটা ভালো নাও হতে পারে। কারণ ভালো কিছু পেতে হলে যথেষ্ট সময়ের প্রয়োজন। হুটহাট আয় করার শখ পূরণ করতে অন্তত ওয়েব ডিজাইনিং কার্যকর ভুমিকা পালন করতে পারে না।
বাংলাদেশে অনেকেই এখনো ফ্রিল্যান্সিং পেশাটাকে বিশ্বাস করতে পারেনি। তাদের মতে পড়াশোনা করে সরকারি চাকুরি করাটাই হতে পারে আয় করার উৎকৃষ্ট মাধ্যম। কিন্তু স্বাধীনচেতা মানুষের ক্ষেত্রে সময়মতো অফিস করাটা বেশ বিরক্তিকর মনে হতে পারে। আমরা মানুষেরা সাধারণত যে কাজটাতে বিরক্ত হই সে কাজটা করে তেমন একটা সফলতা লাভ করতে পারি না। এক্ষেত্রে ওয়েব ডিজাইনিং বেশ যুক্তিযুক্ত একটি মাধ্যম বলে আমি মনে করি। ঘরে বসে বিভিন্ন ডিজাইন নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে করতে বেশ ভালো পরিমাণের অর্থ আয় করার সুযোগ এই ওয়েব ডিজাইনিং সেক্টরটা তৈরি করে দিচ্ছে।
বর্তমানে যে হারে ওয়েবসাইট তৈরি হচ্ছে সে হারে কিন্তু ডিজাইনারের সংখ্যা তেমন একটা বাড়ছে না। বাড়লেও অদক্ষ জনবলে একধরনের গুমোট পরিবেশের সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে বায়ারেরা কাজ করিয়ে তেমন একটা সন্তুষ্ট হচ্ছে না। যেখানে ওয়েব ডিজাইনিংয়ের সেক্টরে কাজের পরিমাণ বেশি সেখানে সে পরিমাণ এক্সপার্ট না থাকার কারণে অনেকেই হতাশ। এক্ষেত্রে ভালোভাবে ওয়েব ডিজাইনিং শিখে কাজে নেমে পড়াটাকে বুদ্ধিমানের কাজ বলে আমি মনে করি। যেহেতু কাজের কোনো অভাব পড়বে না সেহেতু কোমড় বেঁধে কয়েক মাস মনোযোগ দিয়ে কাজ শিখে দক্ষতা অর্জন করতে পারলে ক্যারিয়ারে কখনোই পিছিয়ে পড়তে হবে না।
শেষ কথা
মনোযোগ এবং পরিশ্রম দিয়ে ভালোভাবে কাজ শিখলে আশা করি কাজের অভাব হবে না। প্রয়োজন শুধু লক্ষ্য স্থির করা। নিজেকে কখন কত ভালো ওয়েব ডিজাইনার হিসেবে দেখতে চান সেটি ঠিক করুন। যদি আপনি ওয়েব ডিজাইনিং শিখে সফল হতে চান তাহলে অবশ্যই আপনি সঠিক পথে আছেন। এর পরের ধাপগুলি ভালোভাবে সম্পন্ন করতে থাকুন। দেখবেন শেষের ধাপে সফলতার দেখা অবশ্যই পাবেন।