ইন্টারনেটের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস:
বর্তমান পৃথিবীতে আমাদের সর্বাধিক ব্যবহৃত অতি পরিচিত শব্দগুলোর একটি হচ্ছে ইন্টারনেট । এর ব্যবহারের কথা কারোরই অজানা নয়। ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক বুড়ো সবার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ এটি। একবিংশ শতাব্দীকে ইন্টারনেট ছাড়া কল্পনা করা যায় না।
সমগ্র বিশ্বকে একটি নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে এসেছে ইন্টারনেট। কিন্তু ইন্টারনেটের এতসব কীর্তি কি এক দিনেই হয়েছে ??? না, একদমই না। এর পিছনে রয়েছে বহু মানুষের শ্রম আর প্রচেষ্টা।
আজকের ইন্টারনেট ব্যবস্থা আর আজ থেকে কয়েক বছর আগের নেট সিস্টেম এক ছিলনা। ধীরে ধীরে ধাপে ধাপে এর ব্যাপক পরিবর্তনসাধন হয়েছে। আজকে আমরা সেই ইন্টারনেটের সূচনা আর তার পরিবর্তনের ইতিহাস নিয়েই আলোচনা করব।
ইন্টারনেট কিভাবে এসেছে তা জানার আগে আমাদের জানতে হবে ইন্টারনেট কি। সারা পৃথিবী জুড়ে পরস্পরের সাথে যুক্ত অনেক গুলো কম্পিউটার এর সমষ্টি যা আইপিনেট ওয়ার্কের মাধ্যমে পরস্পরের সাথে তথ্য আদান প্রদান করে। এই বিশাল নেটওয়ার্কিং সিস্টেমকেই বলা হয় ইন্টারনেট। আসুন দেখি ইন্টারনেটের ইতিহাসকি। এর আবিষ্কারক কে, এর আবিষ্কার কে করেছে তার উত্তর দেয়া আসলেই কঠিন। কারন সেই ১৯৬৫ সাল থেকে ২০২০ অবধি একেনানা বিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।
তবে ইন্টারনেটের প্রাথমিক ধারনার ক্রেডিট যা কে দেয়া হয় তিনি হলেন লিউ নার্দক্লাই নরক।ইন্টারনেটের পূর্বসূরি ARPARNET নিয়ে তার লেখায় ইন্টারনেট সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায়। এইযে ARPARNET থেকে কিভাবে আজকের ইন্টারনেট এর সূত্রপাত হল সেটাই জানার বিষয়।
১৯৬৫:
MIT Lincon Lab এ দুটি কম্পিউটারকে প্যাকেট সুইচিং প্রযুক্তির মাধ্যমে যুক্ত করা হয়। এর ফলে গ্রাহক ও প্রেরকের মধ্যে উভমুখী তথ্য আদান প্রদান সম্ভব হয়।
১৯৬৮
১৯৬৮সালে BBN (beranek and newman) Internet message processor এর বিবরন প্রকাশ করে যা প্যাকেট সুইচিং কাজে ব্যবহৃত হত। আর এরপরই তাদের সাথে arpanet এর চুক্তি হয়।
১৯৬৯
এই বছর বেশ কিছু ইউনিভার্সিটি যেমন university of ultah, university of California, stamford research center এই নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হয়। ক্লাইন নামে এক ছাত্র প্রথম
“Lo” মেসেজ পাঠানোর চেষ্টা করে কিন্তু সিস্টেম ক্রাশের কারনে তা ব্যর্থ হয়।
১৯৭২
স্যার স্যামুয়েল ইন্টারনেট ইমেইল কে সকলের সামনে তুলে ধরেন আর এর মাধ্যমে ইন্টারনেটনেট ওয়ার্কিং গ্রুপ স্থাপিত হয়। এটা ইন্টারনেট অগ্রগতির অন্যতম একটি ধাপ।
১৯৭৩
ইন্টারনেটের ব্যাপকতার সাথে সাথে university college of London and Royal radar establishment Arpanet এর সাথে যুক্ত হয়। এবং ইন্টারনেট শব্দটির জন্ম হয়।
১৯৭৪
ARPARNET কমার্শিয়াল ভাবে তাদের যাত্রা শুরু করে যার নাম ছিল Telenet
১৯৭৫
আধুনিক ইন্টারনেটের জনক ভিন্টন সার্ফ আর ববকাহন ইন্টারনেটনেট ওয়ার্কের
প্রটোকল প্রকাশ করেন সেখানে ইন্টারনেট ট্রান্সমিশন প্রটোকল ডিজাইন বর্ননা করেন।
১৯৭৯
খবর আর আলোচনার জন্য Usernet এর জন্ম হয়
১৯৮১
বিশ্ববিদ্যালয় এর নেটওয়ার্কিং সিস্টেম কে একটি নেটওয়ার্ক এ আনার জন্য কম্পিউটার নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করে ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন।
১৯৮২
ARPANET উদ্ভাবন করে টিসিপি এবং আইসিপি যা ইন্টারনেট কে নতুন সংজ্ঞা দান করে। আর এটাই হল আধুনিক ইন্টারনেটের আদর্শ প্রটোকল।
১৯৮৩
১৯৮৩ সালে ওয়েব সাইটের নামকরনের জন্য ডোমেইন নেইম যুক্ত হয়। আর এর সাথে
.com, .org, edu, gov এসব নাম যুক্ত করার জন্য সাইট এর নাম মনে রাখা আগের তুলনায় সহজতর হয়।
১৯৮৪
উইলিয়াম গেবসন সর্বসপ্রথম সাইবার স্পেস শব্দটি ব্যবহারকরেন।
১৯৮৫
ম্যাসাচুসেটস এর সিম্বলিক্স কোম্পানি প্রথম রেজিস্টার্ড ডোমেইনের অধিকারী হন।
১৯৮৬
আমেরিকারন্যাশনালসায়েন্সফাউন্ডেশনসুপারকম্পিউটারগুলোকেএকটিনেটওয়ার্কেরআওতায়নিয়েআসে। আরধীরেধীরেঅন্যান্যপ্রতিষ্ঠানগুলোএরসাথেযুক্তহয়। এই ব্যবস্থার নাম ছিল এনএসএফ নেট। আর এভাবেই ইন্টারনেট ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।
১৯৮৭
Cisco বাজারে নিয়ে আসে তাদের প্রথম রাউটার। এ সময় ইন্টারনেট সার্ভিস প্রদানকারীর সংখ্যা ২০০০০ ছড়ায় ।
১৯৮৯
World.std.com প্রথম বারের মত তাদের কমার্শিয়াল ডায়াল app কে সবার সামনে নিয়ে আসে।
১৯৯০
ইউরোপের রিসার্চ ইন্সটিটিউট এর বিজ্ঞানী টি মবার্নাসলি প্রতিষ্ঠা করেন hyper text mark up language, যা সংক্ষেপে এইচটিএমএল নামে পরিচিত। ইন্টারনেটের ভাষা জগতে এর অবদান অনেক।
১৯৯২:
ইন্টারনেটের দুনিয়ায় সংযোজন হয় অডিও এবং ভিডিও প্রযুক্তির। আর একই সাথে সার্ফিংদা ইন্টারনেট বাক্যটি ও জনপ্রিয়তা লাভ করে।
১৯৯৩
হোয়াইট হাউজ আমেরিকান ইন্টারনেট প্রযুক্তির সাথে যুক্ত হয়। ওয়েবসাইট এর সংখ্যা ৬০০ এর কোঠা পার করে। মার্ক এন্ড্রেসেন নামে এক ছাত্র তৈরি করে মোজাইক ব্রাউজার । প্রচলিত
এনএস এফ নেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল বিশলক্ষের অধিক।
১৯৯৪
Netscape communication এর যাত্রা শুরু হয়। আর সেই সাথে স্টানফোর্ড ইউনিভার্সিটির দুই ছাত্র জেরি এবং ডেভিড YAHOO তৈরি করেন। প্রথমে এর নাম ছিল “JERRY AND DEVID’GUIDE TO THW WORLD WIDE WEB “
১৯৯৫
আমাজন, ইবে, ক্রেইগলিস্ট প্রভৃতি সাইট গুলোর যাত্রা হয়।
১৯৯৬
“ড্যান্সিংবেবি” নামক থ্রিডি এনিমেশন এর ডাবিং করা ভিডিওটা সর্বপ্রথম
ভাইরাল হয়।
১৯৯৮
এসময়ে আবিষ্কার হয় আমাদের সবারপ্রিয় গুগল। আজকে গুগল ছাড়া আমাদের চলেই না।
১৯৯৯
ইন্টারনেটপ্রটোকলএরসিক্সথভার্সনএসময়উন্মোচিতহয়। তবে ফোর্থ ভার্সন যা ৩২ বিটের এটাই এখন পর্যন্ত সর্বাধিক ব্যবহৃত প্রটোকল।
২০০০
ডটকমব্যাপকজনপ্রিয়তালাভকরে। তবে হ্যাকিং সিস্টেম গুলো এসময় মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে।
২০০৩
মাইস্পেস, স্কাইপ, সাফারির উদ্ভাবন হয়। আর সেই সাথে জন্ম হয় সর্ববৃহৎ ব্লগ পাব্লিস ওয়েবসাইট “ওয়ার্ডপ্রেসের”
SQL SLAMMER কয়েক মিনিটেই সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
২০০৪এবং২০০৫ :
বর্তমান সময়ে দুটিজন প্রিয়নেট ওয়ার্কিং মাধ্যম ফেসবুক এবং ইউটিউব এর জন্ম হয়।
ফেইসবুক আবিষ্কার এর মধ্য দিয়ে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং এর দিক থেকে আরেকধাপ এগিয়ে যায় বিশ্ব।
২০০৬:
টুইটার এর প্রতিষ্ঠা করেন জ্যাকডোর্সে। তার লেখা প্রথম টুইট ছিল setting uo my twitter
২০১০
সামাজিক সাইট ইন্সটাগ্রামের জন্ম হয়। ফেইসবুক ব্যবহার কারির সংখ্যা ৪০০ মিলিয়ন ক্রস করে।
২০১২:
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসন অনলাইন পাইরেসি বন্ধ আইন ও মেধাসত্ব সংরক্ষণ আইনের ঘোষণা প্রদানকরেন, যা ইন্টারনেট সেবা প্রদান কারীদের কপিরাইটেড কন্টেন্ট প্রতিরক্ষায় নতুন ধরনের আইনের সূত্রপাত ঘটায়। প্রযুক্তি নির্ভর বিভিন্ন মাধ্যম গুলোকে আইনের আওতায় আনা হয়।
২০১৫
সর্বাধিক ছবি শেয়ারের সাইট হিসেবে ইন্টারনেট জনপ্রিয়তা লাভ করে । এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা চারশ অতিক্রম করে।
২০১৬:
এসময়ব্যক্তিগতসহকারীমাধ্যমহিসেবেগুগলনিয়েআসেগুগলএসিস্টান্টযাসক্রিয়ভয়েসসিস্টেমহিসেবেদ্রুতসময়েজনপ্রিয়তালাভকরে।
এভাবেই ধীরে ধীরে ইন্টারনেট আজকের পর্যায়ে এসে পৌছায় এবং প্রতিষ্ঠা করে নেটওয়ার্কিং বিশ্ব।