মোবাইল ফোন কি? মোবাইল ফোনের ইতিহাস !
লেখা: সুমাইয়া ইসলাম
আধুনিক প্রযুক্তির আবিষ্কার গুলো আমাদের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। বিজ্ঞান মানুষের জীবনে নিয়ে এসেছে একটি অন্যতম আবিষ্কার তা হল মোবাইল ফোন।
মোবাইল শব্দটির সাথে আমরা সবাই পরিচিত । আমাদের নিত্যদিনের জীবনে যে জিনিসটা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় তা হল মোবাইল ফোন। কিন্তু এটা শুধু একটি শব্দ নয়। বর্তমানে এটি হল আমাদের প্রতিদিনের সঙ্গী। কথা বলাই নয়, আধুনিক মোবাইল ফোন দিয়ে আমরা আরো অনেক কাজ করতে পারি যেমন – এসএমএস বা টেক্সট মেসেজ, মাল্টিমিডিয়া মেসেজ , ফ্লাশ লাইট, ব্লু টুথ, ক্যামেরা, গান শুনা, গেমিং, ই-মেইল, ইন্টারনেট, ব্যবসায়িক বা অর্থনৈতিক ব্যবহারিক সফটওয়্যার ইত্যাদি। এসব সুবিধা সম্পন্ন মোবাইল কে স্মার্টফোন বলা হয়।
মোবাইল কি?
তারবিহীন টেলিফোনকে মোবাইল ফোন বলা হয়। এই মোবাইল ফোন কে আমরা আরো অনেক নামে চিনে থাকি যেমন – সেলফোন, সেলুলার ফোন, হ্যান্ড ফোন বা মুঠোফোন । মোবাইল অর্থ ভ্রাম্যমান, সহজেই সব জায়গায় যেকোনো অবস্থায় ব্যবহার করা যায় বলে মোবাইল ফোন নাম দেয়া হয়েছে।
মোবাইল অপারেটররা বিভিন্ন অঞ্চল তাদের সেবা দিয়ে থাকে। যেমন – ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, পঞ্চভুজ বা ষড়ভুজ ইত্যাদি আকারের অনেকগুলো সেলে বিভক্ত সাধারণত ষড়ভুজ আকৃতির সেলই বেশি দেখা যায়।
নেটওয়ার্ক স্টেশনগুলো এই প্রত্যেকটি অঞ্চলগুলোতে তাদের মোবাইল সেবা দিয়ে থাকে। নেটওয়ার্ক স্টেশন বলতে মোবাইল ফোন কোম্পানির এন্টেনা বোঝানো হয়েছে। সেল গুলো সাধারণত প্রতিটি কোণে কোণে অবস্থান করে। অনেকগুলো সেলে বিভক্ত করে সেবা প্রদান করার কারণেই এটি “সেলফোন” নামে পরিচিতি লাভ করে। মোবাইল ফোন রেডিও ওয়েভের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারে যার ফলে অনেক বড় ভৌগোলিক এলাকায় এটি সংযোগ দিতে সক্ষম হয়।
মোবাইল ফোনের ইতিহাস
আজথেকে প্রায় ২০ বছর পূর্বেও মোবাইল ফোন ছিল এক প্রকারের সপ্ন। সে সময়ে তারবিহীন কোন যন্ত্র থেকে কথা বলা যাবে এই বিষয়টি হয়তো কেউ কল্পনাও করতে পারেনি ।
ঠিক যেন রুপকথার মতন, একপ্রান্তে বসে অপর প্রান্তে একটি তারবিহীন যন্ত্রের সাহায্যে কথা বলা যাবে এ কথা কেউ হয়তো ভাবেনি। তবে এই অকল্পনীয় যন্ত্র বাস্তবে তুলে এনেছেন মার্টিন কুপার এবং তার ২০জন কর্মীরা। দীর্ঘ তিন মাসের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে এই যন্ত্র আজ আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে।
সর্বপ্রথম মোবাইল ফোন তৈরি করা হয়েছিল আমেরিকার নিউইয়র্কে। সর্ব
প্রথম মোবাইল ফোনটি যে আবিষ্কার করেন তাদের একজন মোটোরোলা কোম্পানির কর্মচারী ডঃ মার্টিন কুপার এবং অন্যজন ফ্রান্সিস মিচেলক। তাকে মোবাইল ফোনের জনক বলা হয়।
১৯৭৩ সালের এপ্রিলে প্রথম সফলভাবে একটি প্রায় ১ কেজি (২।২ )পাউন্ড) ওজনের হাতে ধরা ফোনের মাধ্যমে কল করতে সক্ষম হন তাঁরা। মোবাইল ফোনটি ছিল ১০ ইঞ্চি লম্বা, দু ইঞ্চি চওড়া, এবং ৪ ইঞ্চি উঁচু। ফোনের ব্যাটারির চার্জ শেষ হয়ে যেতো মাত্র ২০ মিনিট কথা বললেই। কিন্তু তখনকার দিনে এর চেয়ে ভালো কিছু তৈরি করা ছিল অকল্পনীয়।
১৯৭৩ সালে এপ্রিল ৩ তারিখে নিউ ইয়র্কের সিক্সথ এভিনিউ থেকে মার্টিন কুপার সেই ফোন থেকে প্রথম কলটি করেছিলেন এটিএন্ড কোম্পানির একজন ইঞ্জিনিয়ার জোয়েল ইঙ্গেলকে। সে সময় এটিএন্ডটি ছিলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় টেলিকম কোম্পানির মধ্যে একটি। সেখানে মোটোরোলা তুলনায় নিতান্তই একটি ছোট কোম্পানি ছিলো।
১৯৮৩ সালে, মটোরোলা তার প্রথম বাণিজ্যিক মোবাইল ফোন হিসেবে স্বীকৃতি পায়। মোটোরোলা ডায়না টিএসি ৮০০০এক্স (DynaTAC 8000x) নামে পরিচিত। হ্যান্ডসেটটি ৩০ মিনিটের টকটাইম, ছয় ঘন্টা স্ট্যান্ডবাই এবং ৩০ টি ফোন নম্বর সঞ্চয় করতে পারে। ১৯৯০ সাল থেকে ২০১১ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২.৪ মিলিয়ন ছাড়িয়েছে। মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা মিলিয়ন থেকে বিলিয়নের হয়ে গেছে। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮৭% মোবাইল ফোন ব্যবহার করে।
বর্তমান বিশ্বে মটোরোলা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বিখ্যাত প্রযুক্তি নির্মাতা। সেকালে ছিল ছোট্ট একটি টেলিকম কোম্পানি। সেই ছোট্ট কোম্পানিতেই চাকরি করতেন কুপার। তার স্বপ্ন ছিল অনেক বড়। বড় কিছু করবে যার জন্য মানুষে তাকে চিনবেন। তার আবিষ্কৃত কোনো জিনিস মানুষের মাঝে পৌঁছে দিবেন । তিনি ভাবতেন, এমন একদিন আসবে যেদিন সবার হাতে হাতেই তার নিজস্ব মোবাইল ফোন থাকবে যার মাধ্যমে যেকোনো সময়, যেকোনো মানুষের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হবে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। সেই সময় সাধারণ মানুষের কাছে তার এই স্বপ্ন ছিল কল্পকাহিনীর মতো। অবশেষে কুপার একটি ফোন তৈরি করলেন। সেই ফোনটিতে সর্বমোট ৩০টি ইলেকট্রিক্যাল সার্কিট ব্যবহার করা হয়। সাংবাদিকদের দেখানোর জন্য ১৯৭৩ সালে এই মোবাইলের দুটি প্রোটোটাইপ তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু ছোট্ট এই টেলিকম কোম্পানিকে সেভাবে সাংবাদিকেরা গুরুত্ব দেননি। সেই অনুষ্ঠানে ১৫-২০ জনের বেশি সাংবাদিক অনুপস্থিত ছিল। পরবর্তীতে এই মোবাইলটি কীভাবে কাজ করে দেখানোর পর, তারপর সারা বিশ্বে এই ফোনের খবর প্রচারিত হয়ে গেল এভাবেই টেলিকম কোম্পানি খ্যাতি অর্জন করা শুরু করে।
বর্তমানে ৯০ বছর বয়সী মার্টিন কুপার নিত্যনতুন আবিষ্কার করে চলছেন। কিভাবে স্বাস্থ্য বিধি মেনে কানে লাগিয়ে রাখার মতন ছোট মোবাইল ফোন তৈরি করা যায় সেই পরিকল্পনা করছেন। তিনি এখন ক্যালিফোর্নিয়ায় বাস করেন।
মোবাইল ফোনের প্রসার দিনদিন বেড়েই চলছে। মোবাইল ফোন যে এতদ্রুত মানুষ গ্রহন করবে তা কুপার নিজেও ভাবতে পারেন নি। প্রতিটি মানুষ এখন মোবাইল ফোন ওপর নির্ভরশীল। সকালে ঘুম থেকে উঠে রাতে ঘুমোতে যাওয়া পর্যন্ত মোবাইল ফোনের ওপর আমরা কোনো না কোনো ভাবে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে থাকি। মোবাইল ফোনের এত সফলতা দেখে কুপার বলছেন ‘আমার মনে হয় আমরা ঠিক কাজটাই করেছিলাম’।